বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে জটিলতা কাটিয়ে স্বচ্ছতা ও সহজীকরণে এনটিআরসিএ’র আইনে সংশোধন আনা হচ্ছে। নতুন আইনে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা থাকছে না। নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে শূন্যপদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হবে।
বর্তমান নাম পরিবর্তন করে বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন (এনটিএসসি) গড়ে তোলা হবে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আদলে এটি গড়ে তোলা হবে বলে জানা গেছে। এনটিআরসিএ থেকে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে।
এনটিআরসিএ’র নিবন্ধনের লিখিত-মৌখিক পরীক্ষায় পাস করা প্রার্থীদের একটি জাতীয় মেধাতালিকা রয়েছে। সারাদেশের শিক্ষক শূন্য আসনের তালিকা সংগ্রহ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। জাতীয় মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত প্রার্থীরা নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারেন। মেধাক্রম অনুযায়ী এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। এনটিআরসিএ’র সব কার্যক্রমে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্তমান জনবল দিয়ে বিশাল সংখ্যক প্রার্থীর নিয়োগ পরীক্ষা, শূন্যপদের তালিকা সংগ্রহ ও নিয়োগের সুপারিশ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তার ওপর যারা শূন্যপদের তালিকা দিচ্ছেন তারা নানা ধরনের ভুল চাহিদা দিচ্ছেন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার আমাদের সুপারিশ করা প্রার্থীদের যোগদান করতে দিচ্ছে না।
দেখা গেছে, এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে সারাদেশ থেকে শূন্যপদের তালিকা সংগ্রহ ও নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনায় নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে। নিবন্ধন পরীক্ষা আয়োজন ও ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব, শিক্ষক নিয়োগে জটিলতাসহ নানা কারণে এ প্রতিষ্ঠানের কাজকর্মে বিতর্ক উঠেছে। অনেকে এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের সক্ষমতা ও যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। নিয়োগপ্রত্যাশীরা নিয়োগবঞ্চিত ও নানাভাবে ভুক্তভোগী হয়ে আদালতে গিয়ে মামলা দিচ্ছেন। এতে এনটিআরসিএ’র কাজকর্মে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। আদালতে এ সংক্রান্ত সহস্রাধিক মামলা করা হয়েছে। নিয়োগপ্রত্যাশীরা নিয়োগের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেও নিয়োগ পাচ্ছেন না। এ প্রতিষ্ঠানের কাজের জটিলতা কাটাতে পিএসসি’র আদলে বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন (এনটিএসসি) রূপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বর্তমান কাঠামোর আদলেই জনপ্রশাসনের একজন অতিরিক্ত সচিবকে চেয়ারম্যান ও পাঁচজন যুগ্ম সচিবকে সদস্য করে এনটিএসসি গঠিত হবে।
এ কমিশন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের জন্য যোগ্য প্রার্থী বাছাই করে তাদের চাকরির সুপারিশ করবে। সে ক্ষেত্রে আর শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা আয়োজন করা হবে না। সারাদেশ থেকে শূন্য আসনের তালিকা সংগ্রহ করে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজন করবে এনটিএসসি। যোগ্য প্রার্থীদের শূন্য আসনে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবে। জানতে চাইলে এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান বলেন, এনটিআরসিএ’র সব কার্যক্রমে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্তমান জনবল দিয়ে বিশাল সংখ্যক প্রার্থীর নিয়োগ পরীক্ষা, শূন্যপদের তালিকা সংগ্রহ ও নিয়োগের সুপারিশ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তার ওপর যারা শূন্যপদের তালিকা দিচ্ছেন তারা নানা ধরনের ভুল চাহিদা দিচ্ছেন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার আমাদের সুপারিশ করা প্রার্থীদের যোগদান করতে দিচ্ছে না। এনটিএসসি’র জন্য একটি খসড়া আইন তৈরি করতে এনটিআরসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেটি এ মাসের মধ্যে পাঠানোর কথা রয়েছে। সেটি পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যেহেতু এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্থের একটি বড় অংশ রাজস্ব খাত থেকে দেওয়া হয়। সেহেতু শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা ও সহজীকরণ করা প্রয়োজন। সে কারণে এনটিআরসিএ’র বর্তমান আইন সংশোধন করা হচ্ছে তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের কাজের গতি বেগবান করতে বর্তমান আইন পরিবর্তন করে পিএসসি’র আদলে এ প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে লক্ষ্যে বর্তমান আইন সংশোধন করে একটি খসড়া তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে সেই খসড়া তৈরি করেছি। নির্বাহী বোর্ডের সভায় সব সদস্যকে সেটি মূল্যায়ন করতে দেওয়া হয়েছে। তাদের মূল্যায়নের পর সেটি চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, নতুন কমিশন গঠনের সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতিও বদলে যাবে। ২০২০ সালে এনটিএসসি গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই সময় এ কার্যক্রম শুরু করা হলেও এনটিআরসিএ’র গাফিলতির কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে আইন সংশোধন কাজ শুরু হয়েছে। চলতি মাসে সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ কমিশনের আইনের খসড়া তৈরির পর সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর সচিব পরিষদের পর মন্ত্রিপরিষদের সভায় তোলা হবে। সেখানে অনুমোদন হলে তা জাতীয় সংসদে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। এনটিএসসির জন্য জনবল নিয়োগে পদ সৃজন ও নিয়োগ দিতে হবে। অফিস তৈরি করতে হবে। এসব মিলিয়ে সময় প্রয়োজন আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি বিদ্যালয়) ফৌজিয়া জাফরীন বলেন, এনটিএসসি’র জন্য একটি খসড়া আইন তৈরি করতে এনটিআরসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেটি এ মাসের মধ্যে পাঠানোর কথা রয়েছে। সেটি পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, যেহেতু এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্থের একটি বড় অংশ রাজস্ব খাত থেকে দেওয়া হয়। সেহেতু শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা ও সহজীকরণ করা প্রয়োজন।
সে কারণে এনটিআরসিএ’র বর্তমান আইন সংশোধন করা হচ্ছে। জানা গেছে, শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়নের উদ্দেশ্যে ২০০৫ সালে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ বা এনটিআরসিএ গঠিত হয়। এটা ছিল প্রার্থীদের প্রাক-যোগ্যতার সনদ। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে ২০১৫ সাল থেকে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব এনটিআরসিএকে দেওয়া হয়। এর আগে নিবন্ধন সনদধারীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের একক ক্ষমতা ছিল ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির হাতে। এখন সেটি এনটিআরসিএ’র ওপর ন্যস্ত আছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন