ভাস্কর্য নিয়ে বিভ্রান্তি গ্রহনযোগ্য নয়

ভাস্কর্য নিয়ে বিভ্রান্তি গ্রহনযোগ্য নয়

একবার দেশে (১৯৯৮সালে) মারাত্মক বন্যা হলো। দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়লো। স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছুটি ঘোষণা করা হলো।  অনেকেই স্কুল কলেজ আবার অনেকেই রাস্তায় অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিলো। ঠিক একই সময়ে দেশের অনেক মানুষই কোটি কোটি টাকা খরচ করে হজ্জে গেলেন। যারা ধর্মের নামে এখানে ওখানে বক্তৃতা দেন বা ইসলাম ইসলাম বলে গলা ফাটান তাদের কোনও ভুমিকা-ই দেখা গেলোনা অসহায়, আশ্রয়হীন মানুষদের সাহায্যে!

দেশের কোনো ইসলামী চিন্তাবিদ বললেন না, যে এবার হজ না করে টাকাটা বন্যাদুগর্তদের দেওয়া হোক। মানুষের জন্য ধর্ম না ধর্মের জন্য মানুষ? ইসলামে কি বলে?যতদুর জানি, ইসলামে একটা কথা স্পষ্ট বলা আছে, প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকলে ঈমান থাকেনা। ঈমানই যদি না থাকে তাহলে হজ্জ হয় কিভাবে?  

হিসাব সোজা। আমাদের দেশের ইসলামী চিন্তাবিদ থেকে শুরু করে মাওলানাদের অনেকেই বদলি হজ্জ করে কিছু আয় করেন। অনেক হুজুরের দেখেছি হজ্জ এজেন্সির সাথে ব্যপক লাইন। তারা হাজী ধরে এনে কিছু আয় করেন। দেশের দুর্যোগ মুহুর্তে মানুষকে ফেলে হজ্জে যাওয়া কোনও ধর্ম নয়। কিন্তু আমাদের দেশের মাওলানা বা ইসলামী চিন্তাবিদেরা তা বোঝেন না, পেট বাঁচানোর তাগিদে।

সিডর বা আইলার মতো দুর্যোগের পর যখন অনেক মানুষ বিপদে, তখন এক শুক্রবারে নামাজে গিয়ে দেখা যায় প্রতি শুক্রবারের মতো সেদিনও মসজিদের উন্নয়নের নামে টাকা পয়সা তোলা হলো। মানুষও টাকা পয়সা দান করলো। আর দুর্যোগে যারা কষ্টে আছেন তাদের জন্য হুজুর শুধু দোয়া করলেন। হুজুর মসজিদের জন্য যে টাকা তুললেন সে টাকা দুর্গতদের দেওয়াটাই কি আসল ধর্ম ছিলোনা? আমি আজ পর্যন্ত কোনো দুর্যোগ মুহুর্তে হুজুর বা ইসলামী চিন্তাবিদের কোনো জাগতিক ভূমিকা দেখিনি। মানবিক বিবেকবোধই যাদের নাই, এরা কি করে মূল ধর্ম পালনকারী হয়! কি করে ধর্মপ্রাণ মানুষ হয় তা আমার জানা নেই। 

যে নারী গর্ভে জন্ম সেই নারী জাতকেই তেঁতুলের টকের সাথে তুলনা করতেও ছাড়েননি ইসলাম নামধারী একটি সংগঠনের প্রধান! ইসলাম নামধারী কয়েকটি সংগঠন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলেন। কোনও বিভ্রান্তমুলক কথাবার্তা গ্রহনযোগ্য নয়।অনেক ইসলাম নামধারী সংগঠন মানবতা, মনুষ্যত্ব বোধেন না! অথচ ইসলাম ইসলাম বলে গলা ফাটান! সবিনয়ে বলতে চাই, উগ্রতা নয় ; ধৈর্য- সহনশীলতা মন ও মননে ধারণ করুন। কোনও উস্কানি বা বিভ্রান্তজনক কথা না বলে মানবতার কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে এবং মুল ধর্মের পথে কাজ করুন।

অনেক দিন আগের একটি ঘটনা বলছি, আমি শিল্পকলা একাডেমি থেকে ফিরছিলাম সাথে এক বন্ধু ছিলো। গেট পেরুতেই বাবার সাথে দেখা, উনি কি একটা কাজে গিয়েছিলেন এখন দোকানের উদ্দেশ্যে ফিরছেন। উনার রিকশায় তার সাথে একজন পরিচিত লোক। বাবা ডাক দিলেন এবং একটি খালি রিকশা ডেকে বন্ধুকে নিয়ে ওঠলাম। সামনের রিকশাতে বাবা ও তার পরিচিত লোকটি আর পেছনের রিকশাতে আমি ও আমার বন্ধু। কিছুদূর যেতেই হঠাৎ বাবার রিকশাটি থেমে গেলো এবং সহযাত্রী সেই লোকটিকে বাবা রিকশা থেকে নামিয়ে দিয়ে বলছেন, আর কোনোদিন তুমি আমাদের বাসায় আসবে না।

হলোটা কী, বাবা কেন তার পরিচিত এই লোকটিকে হঠাৎ নামিয়ে দিলেন? বাবা জানালেন লোকটির অপরাধ, সে বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করছিলো। তাই তাকে নামিয়ে দিয়েছেন। আমি বললাম- মানুষ তো বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করতেই পারে, তাই বলে তাকে নামিয়ে দিতে হবে?

বাবা বললেন, অবশ্যই সমালোচনা করতে পারে। কিন্তু আমার সামনে উল্টো পাল্টা  বললে আমি সহ্য করবো না। আমার সামনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে উল্টো পাল্টা বলবে আর তাকে আমি পাশে বসিয়ে নিয়ে যাবো? কোনদিনই না।  আমার বাবা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একজন কট্টর সমর্থক। কাজেই তিনি তার জায়গা থেকে প্রতিবাদ করেছেন। আমার এই গল্পটি বলার একটি কারণ আওয়ামী লীগের কোটি কোটি সমর্থক, কাগজে-কলমে যারা আওয়ামী লীগ করেন, যারা বিভিন্নভাবে দলের কাছ থেকে সুবিধা গ্রহণ করেন, তারা সব কোথায়?

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে চরমোনাই আর মামুনুল হকের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের জোর কণ্ঠে জবাব দিলেন না কেউই। সবাই যেন কেমন চুপ হয়ে গেলেন! তেমনভাবে জোর প্রতিবাদ করছেন না কেউ! সম্প্রতি একটি ইসলামী সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে অনেক উল্টো পাল্টা বক্তৃতা দিতে শোনা গেছে! আমার প্রশ্নটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা নিয়ে। বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার অভিযোগ তুলে এ পর্যন্ত কতোজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে? কতোজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে?

অবশ্য আওয়ামী লীগের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ আরও দু-একজন বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিবাদ করেছেন। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উনারা অবজারভ করছেন। উনার বক্তব্যকে কি আমরা অফিসিয়াল বক্তব্য হিসেবে ধরে নিবো? মনে প্রশ্ন জাগে আওয়ামী লীগ এতোগুলো বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পরও কেন এই দুর্বল আচরণ?দেশ স্বাধীনের অনেক পরে আমার জন্ম হলেও অনেক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জেনেছি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ঠিক এমনটিই ঘটেছিলো! সেসময় কোনো আওয়ামী লীগার কোনোরকম প্রতিবাদ করেনি। অবশ্য সময়টি অন্য রকম ছিলো, সামরিক ক্যু’র পর সাধারণত কেউ পথে নামতে চায়না। ভয় পায়। সেই দুর্বলতার ভার অবশ্য বহুবছর আওয়ামী লীগকে এবং দেশবাসীকে বহন করতে হয়েছে।

এখন যারা দলে-বলে নিজেদের আওয়ামী লীগার বলে দাবি করেন, তাদের মধ্যে কতোজন প্রকৃত সমর্থক? কতোজন ছদ্মবেশী সমর্থক? এর একটা জরিপ হওয়া দরকার।

বছরের পর বছর ধরে, যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বা আছেন, তারা খুবই অবাক হোন; ইতিহাস সমৃদ্ধ দলটির কৌশলগত পরিবর্তন দেখে। বঙ্গবন্ধুর সময়কার একজন সাবেক এমপি এবং মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর আগে লিখে গেছেন, আমার স্বদেশ আমার কাছে ক্রমশ অচেনা হয়ে যাচ্ছে। আমার দল এবং দলের লোকগুলোও অন্যরকম হয়ে গেছে, আর মুক্তিযুদ্ধ? এর কথা আর নাইবা বললাম।

আমরা সবাই যেন অন্যায়ের প্রতিবাদ তেমন জোরালোভাবে করতে পারছিনা! ব্রিটিশ শোষক, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আমাদের এবং যে ভূমিকা ছিলো, তা কোথায় যেন উধাও হয়ে গেলো! 

আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি না। আর পারছি না বলেই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করার সাহস দেখাতে পারে, বিভ্রান্তমুলক কথাবার্তা ছড়াতে পারে একটি গোষ্ঠী!

এবার দৃষ্টি ফেরাচ্ছি আলোচ্য বিষয়ের ওপর। আমি বলতে চাচ্ছি ভাস্কর্যের সাথে মূর্তি উপাসনার কোনো সম্পর্ক নেই। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বিখ্যাত ব্যক্তিদের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়ে থাকে, তাদের স্মরণীয় করে রাখার জন্য, পূজা করার জন্য নয়। অসংখ্য ইসলামি দেশেও অনেক ভাস্কর্য রয়েছে।

মিশর একটি ইসলামিক দেশ। সেখানে ধর্মীয় রীতি-নীতি যেমন মানা হচ্ছে, তেমনি সে দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকেও তুলে ধরা হচ্ছে। মিশরের বিভিন্ন জায়গায় সে দেশের ফেরাউনদের ইতিহাসকে ঘিরে নানা রকমের স্ট্যাচু বিক্রি করছে দোকানিরা। তাই দেখে আমি ফেসবুক লিষ্টে থাকা এক লোককে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনারা ইসলামি দেশ হওয়া সত্ত্বেও এতো ধরণের মূর্তি বা ভাস্কর্য বিক্রি করছেন, এতে কি গুনাহ হবেনা?

উনি বললেন, তা কেন হবে? একটি আমার ধর্ম, অন্যটি আমার কালচার। কোনোটির সঙ্গে কোনোটির বিরোধ নেই। আমরা তো এসবকে বা কোনও দেব-দেবীকে পূজা করিনা। তাহলে আর অসুবিধা কোথায়?

 উত্তর শুনে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। তাঁর কনসেপ্ট কতো পরিষ্কার।

  তুরস্কও আরেকটি ইসলামিক দেশ। সে দেশে অনেক মসজিদ, পুরনো আমলের চার্চ ও স্থাপত্য নিদর্শন আছে। সব কিছুকে ঘিরে আছে সে দেশের ইতিহাস। আয়া সোফিয়া ছিলো এমন একটি পর্যটন কেন্দ্র, যেটি একইসঙ্গে চার্চ, মসজিদ এবং মিউজিয়াম হিসেবে মানুষ দেখতে যেতো। এটি নির্মাণ করা হয়েছিল সেই ৫৩২ এবং ৫৩৭ সালের মধ্যে কনস্টান্টিনোপলের খ্রিস্টান ক্যাথেড্রাল হিসাবে। চার্চটি প্রজ্ঞার ঈশ্বর লোগোসকে উৎসর্গ করা হয়েছিলো।

১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর অটোমান সাম্রাজ্যের তৎকালীন মুসলিম শাসক ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদ এটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করেন। যদিও চতুর্থ ক্রুসেডের নেতৃত্বাধীন ভেনিসের ডেজ এবং ১২০৪ স্যাক কনস্টান্টিনোপল, এনরিকো দানডোলোকে এই গির্জার মধ্যেই সমাহিত করা হয়েছিলো। আয়া সোফিয়ার বাইজেন্টাইন আর্কিটেকচার অনুযায়ী নীল মসজিদ, ইহজাদে মসজিদ, সলেমনিয়া মসজিদ, রিস্টেম পাশা মসজিদ এবং কালী আলী পাশাসহ আরও অনেক উসমানীয় মসজিদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিলো।

এটি ১৯৩১ সাল পর্যন্ত মসজিদ হিসেবে থেকে যায়। এরপর এই স্থাপনাটি ১৯৩৫ সালে আধুনিক তুরস্কের স্থপতি ও স্বাধীন তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক যাদুঘরে রূপান্তর করেন। সেই যাদুঘরে দেখা যায় খৃষ্টীয় ও মুসলিম সভ্যতার কী অনবদ্য রূপ। সেখানে একদিকে যেমন মিনার আছে, নামাজের জায়গা দেখা যাচ্ছে, আবার একইসঙ্গে মার্বেল পাথরে অঙ্কিত যীশু ও মা মেরির অনেকগুলো ছবি। এর ভেতরে প্রবেশের পর অদ্ভুত একটি অনুভূতি হতে বাধ্য। মনে হয়, চোখের সামনে ইতিহাসের দরজা খুলে গেল।

সেদিন পত্রিকায় দেখলাম তুর্কমেনিস্তানের রাজধানীর ঠিক মাঝখানে সোনা দিয়ে বাধানো একটি বিরাট আকারের এলাবাই কুকুরের স্ট্যাচু উদ্বোধন করা হয়েছে। কারণ এই এলাবাই কুকুর হচ্ছে তাদের খুব প্রিয় ও পাহারাদার কুকুর। তাই তাকে সম্মান জানানোর জন্য অনেক স্ট্যাচুর পাশে সেই কুকুরের স্ট্যাচুও শোভা পাচ্ছে। আরও আছে ঘোড়ার স্ট্যাচু, তার ওপর সওয়ার হয়ে আছেন দেশের প্রেসিডেন্ট স্বয়ং। তারা মনে করেন, দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ধর্মের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। অথচ তুর্কমেনিস্তান একটি মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র। এখানে শতকরা ৮৯ ভাগই সুন্নি মুসলিম। চারপাশে প্রতিবেশী কট্টর মুসলিম দেশ উজবেকিস্তান, আফগানিস্তান এবং ইরান। সে দেশের মানুষেরা মনে করেন, তাদের ধর্ম ইসলাম এবং তারা ইসলামকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই গ্রহন করেছেন।

কিরগিজস্তান আরেকটি মুসলিম দেশ। শতকরা ৮৮ জনই মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও এটি একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এখানে ইসলাম ধর্মকে নিজেদের সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছেন তারা। চমৎকার সব ভাস্কর্য রয়েছে শহর জুড়ে।

পাকিস্তানেও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বিশাল সাইজের ভাস্কর্য আছে। বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বড় সাইজের এই ভাস্কর্যটি নিয়ে কিন্তু সে দেশে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। পাক-ভারত উপমহাদেশের শিখ রাজ্যের অধিপতি ছিলেন মহারাজা রণজিৎ সিং। তিনি পরিচিত ছিলেন শের-এ-পাঞ্জাব নামে। রণজিৎ সিংয়ের স্ট্যাচু উদ্বোধন করা হয়েছে লাহোর ফোর্টে, বীরের স্মৃতির উদ্দেশ্যে।ইউরোপ। ১১ শতকে আল-আন্দালুস বা ইসলামিক স্পেনে তৈরি করা হয়েছিল পিসা গ্রিফিন বলে বিশালাকায় একটি ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য। এটি ছিলো একটি মিথলজিক্যাল চরিত্র, সামনে ঈগলের মুখ, পেছনে সিংহের শরীর। এটিই ছিলো মধ্যযুগের ইসলামিক মেটাল ভাস্কর্য।

 ইসলামে মূর্তি পূজা নিষিদ্ধ ও অপরাধ। কিন্তু পূজা না করে, শুধু স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে যে ভাস্কর্য তৈরি করা হয়, তাতে কোনো অসুবিধা নেই।জাকার্তা পোষ্টের একটি লেখায় দেখলাম, আল আজহার’র সাবেক গ্র্যান্ড ইমাম (১৯৮২-৯৬) এবং ইসলামি সংস্কারক ও চিন্তাবিদ যাদ আল হক এবং আরেকজন ইসলামি চিন্তাবিদ ও আধুনিক ইসলামের ব্যাখ্যাকারী মুহাম্মদ ইমারাহ বলেছেন, যতোক্ষণ পর্যন্ত কোনো স্ট্যাচুকে পূজা করা হয় না, ততোক্ষণ পর্যন্ত এতে কোনো সমস্যা নেই।

    এই মতের সমর্থনে প্রথমদিককার মুসলিম ইতিহাসের কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে ওই লেখায়। নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (স:) এর সঙ্গী এবং আরব কমান্ডার আমর ইবনে আল আস আল সাহমি যখন মিশর জয় করেন এবং ৬৪০-৬৬৪ পর্যন্ত বিরতি দিয়ে মিশরের গভর্নর ছিলেন, তখন তিনি সেখানকার কোনো মূর্তি ভেঙে ফেলেননি। নবীজির আরেকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস যখন পারশিয়া বা আজকের ইরাক জয় করে সেখানকার গভর্নর হন ৬৩৬ খৃষ্টাব্দে, তখন তিনিও মূর্তি ভাঙার কোনো উদ্যোগ নেননি। কারণ ওগুলো তখন আর পূজার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল না।

অনেক ইসলামী রাষ্ট্রেই ভাস্কর্য রয়েছে। অনেকটা ক্ষোভ নিয়েই বলতে হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও কালচার নিয়ে একশ্রেণীর লোকের গা জ্বালা করে! তারা এসব মানতে চায়না! বলাবাহুল্য, এই দেশে জিয়াউর রহমানেরও ভাস্কর্য রয়েছে তাতে কারও কোনও মাথা ব্যথা নেই কিন্তু জাতির জনকের ভাস্কর্য দেখলে একশ্রেণির মানুষের গাত্রে জ্বালা ধরে! চুলকানি শুরু হয়ে যায়! ভাস্কর্য নিয়ে উল্টো পাল্টা ফতোয়া, বক্তব্য দেয় তারা! ওসব চুলকানি ওয়ালাদের বিভ্রান্তমুলক মুখ চুলকানি কথাবার্তা বন্ধ না হলে ওদের চুলকানির মলম প্রয়োগ করা অতীত দরকার। 

ভাস্কর্য নিয়ে বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বা বিতর্ক কোনও ভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।আমাদের এটাও বুঝতে হবে, ফুল দিয়ে ভালোবাসা জানানো মানে পূজা করা নয়। এটা আমাদের কালচার। 

ধর্ম ও কালচার কোনোটির সঙ্গে কোনোটির বিরোধ নেই।

 

 রুদ্র অয়ন  

লেখক, কলামিস্ট ও সাংস্কৃতিকর্মী  

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password