সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাতটি কলেজের বর্ষ পরিবর্তনের পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় ঢাবি ও সাত কলেজ সমন্বয়ক প্রধান অধ্যাপক আই,কে সেলিমুল্লাহ খোন্দকার স্যার(অধ্যক্ষ ঢাকা কলেজ)।
পরীক্ষা শুরুর মাত্র ১০ দিন আগে এমন পোস্ট দেখা যায় সেলিমুল্লাহ স্যারের আইডি থেকে। জানা যায়, ১ সেপ্টেম্বর থেকে সশরীরে শুরু হতে যাচ্ছে সরকারি ৭ কলেজের অনার্স ও ডিগ্রী সকল স্থগিত ও বর্ষ পরিবর্তন পরীক্ষা।সেখানে ৩ বিষয়ে অকৃতকার্যদের বিশেষ শর্তে পরবর্তী বর্ষে উঠানো ও পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি মেলে।
তবে তরিঘরি করে এমন সিদ্ধান্তকে ভালভাবে নিচ্ছে না সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
তারা জানায়, খোলা হচ্ছে না আবাসিক হলগুলো। ছাত্রাবাস না খুলে পরীক্ষা নেওয়ায় ঢাকায় এসে থাকার জায়গা নিয়ে নানাবিধ সমস্যায় পড়েছেন পরীক্ষার্থীরা।
রাজধানীর এই সরকারি সাত কলেজের মধ্যে আছে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি বাঙলা কলেজগুলোতে আবাসিক ছাত্রাবাস রয়েছে। সব মিলিয়ে এই কলেজগুলোর প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী।ছাত্রাবাসে থাকেন।
তবে তাদের কাউকে দেওয়া হয় নি কোনো টিকা।স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত না করে এই সিদ্ধান্তকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অযৌক্তিক বলে দাবি করছে। এতে ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকার ফলে এখন এত কম সময়ে ঢাকায় এসে বাসা খুঁজে বের করাটা তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারপর অনেকের রয়েছে আর্থিক সংকট।
করোনা মহামারীতে অর্থ সংকটে পড়েছে অনেক শিক্ষার্থী। নিয়েছেন কর্ম জীবনের দ্বার। এমন সংকটময় সময়ে এসে, বাসা খুঁজে নেওয়া ও তার অর্থ বহন করা কারো কারো প্রায় অসম্ভব। হঠাৎ করে ঢাকায় এসে মেসে উঠার সামর্থ্য নেই অনেক শিক্ষার্থীর। সব থেকে বেশি বিড়ম্বনায় পড়েছেন ঢাকা ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এই দুই কলেজে আবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘আবাসিক শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গা নিশ্চিত না করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি। তাদের দাবি,মাত্র ১০ দিনের মধ্যে তারা কীভাবে বাসা খুজবে। এতো কম সময়ে কিভানে তারা ইয়ারফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবে। আর ম্যাচে গাদাগাদি করে থাকলে তাহলে স্বাস্থবিধি কিভাবে বজায় থাকলো।
তাদের আরো দাবি, টিকা ছাড়াই সশরীরে পরীক্ষা হলে এতদিন কেন পরীক্ষা নেওয়া হলো না।এসব প্রশ্নের কোনো সদউত্তর দিতে পারেন নাই ঢাবি অধিভুক্ত সরকারী ৭ কলেজের সমন্বয়ক প্রধান স্যার আই,কে সেলিমুল্লাহ।বরং তিনি এসব দায় ঢাবি ও শিক্ষা-মন্ত্রণালয়ের উপর চাপিয়ে দিয়ে চরম অযোগ্য ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।এমনকি ৭ কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আই,কে সেলিমুল্লাহ স্যারের পদত্যাগের দাবিও ওঠে।
এ বিষয়টি নিয়ে ঢাকা কলেজের একজন শিক্ষার্থী নাম না প্রকাশে জানায় যে, পরীক্ষা শুরুর মাত্র ১০ দিন আগে ঘোষণা দেয়া হয়েছে সশরীরে পরীক্ষা হবে। এখন কথা হচ্ছে, আমরা ঢাকায় এসে থাকার জায়গা খুঁজব নাকি পড়ালেখা করব। এটি একটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। এতে আমাদের অধ্যক্ষ অযোগ্যতা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বলে আমি মনে করি। অন্তত যাদের পরীক্ষা আছে তাদের জন্য হল খুলে দেয়া সময়ের দাবি। তাহলে আর মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয় না। আমাদের অনেকের ম্যাচ ভাড়া করে থাকার মতো অবস্থা নেই।
আমাদের দাবি পরীক্ষা শুরুর আগেই যেন শুধু পরীক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দেয়া হয় এবং আবাসিক সংকট দূরীকরণে ছাত্রাবাসে কেবল পরীক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
ইডেন মহিলা কলেজের আবাসিক আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, এভাবে যদি আমাদের আবাসনের কথা বাদ দিয়ে সশরীরে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় তাহলে আমাদের স্বাস্থঝুকি তো থেকেই যাচ্ছে।এর দায় কে নেবে? সাত কলেজ, ঢাবি, নাকি সরকার! সবাই তো দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা মেয়েরা ঢাকায় এসে থাকব কোথায়? আমরা তো আর যেখানে সেখানে থাকতে পারি না।যেখানে ছেলেরাই হিমশিম খাচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। আর এমন সংকটের দিনে কে কাকে থাকার জায়গা করে দিবে। পারিবারিক অবস্থাও সূচনীয়। আর সবার তো আর ঢাকাতে আত্মীয় নেই। মেসে উঠতে গেলেও অনেক টাকার প্রয়োজন। অনেকের আর্থিক অবস্থা খারাপ। আমাদের যাদের পরীক্ষা রয়েছে তাদের জন্য হল খুলে দিলে এত মানসিক টেনশনে থাকতে হয় না। আমরা হল খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। এদিকে পরিবার থেকে নানাধরনের বিধিনিষেধ দিচ্ছে।এমতাব্যস্থায় আমরা কি করব?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন এখন কোনো অবস্থাতেই হল খোলা সম্ভব না। কারণ একটা রুমে একাধিক শিক্ষার্থী থাকে। এমন যদি হত সিঙ্গেল রুম যাদের পরীক্ষা তারা তাদের রুমে থাকবে। পরীক্ষা শেষ হলে চলে যাবে। আমাদের তো আর এক রুমে একজন থাকে না। এই কোভিডে এটা একদমই গ্রহণযোগ্য করা যাবে না। অন্তত যতক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেয়া শেষ না হচ্ছে।
তবে সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, হল খোলার সিদ্ধান্তের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় পরামর্শক কমিটি গ্রহণ করতে পারে। তারা যখন আমাদের হল খোলার বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন তখনই আমরা হল খুলতে পারব। এটি আমাদের সাত কলেজ প্রশাসন অথবা অধ্যক্ষরা কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই ব্যাপারগুলো দেখছেন। তার নির্দেশনা ছাড়া হল খোলার এখতিয়ার আমাদের নেই।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন