স্বপ্ন কে তাড়া করে ছুটে চলছি আমরা প্রতিনিয়ত। ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হয়ে যখন ফিরছি বাড়িতে, হিসাব মেলানোর খাতায় আমাদের জীবনের হিসাব কি ঠিক ঠাক মিলছে?
সেই স্কুল জীবন থেকেই হিসাবের খাতা ভয় নিয়েই আজ অবধি চলছে। ছোটবেলায় স্কুলে পড়াশোনা ঠিকমত না করলে বাবা মায়ের পিটুনি খাওয়ার ভয়, ৫ম এবং ৮ম শ্রেনীতে বৃত্তি শাখায় চান্স না পেলে আশেপাশের বন্ধু বান্ধবের পিতামাতার কাছে থেকে লজ্জা পাওয়ার ভয়। আর ৯ম শ্রেনীতে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়তে না পারলেতো জীবনের ৮ আনাই বৃথা যাবার ভয়।
এছাড়া, জিপিএ-৫ এর দুনিয়ায় এটা না পেলে জীবনের আরও বাকি ৮ আনাই বৃথার হবার ভয়তো আছেই।
এরপর ধাপে ধাপে জীবনের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আমাদের সকলের আপ্রাণ চেষ্টা। স্কুল থেকে কলেজ আর কলেজ থেকে পরবর্তী সময়তো জীবনভর অনিশ্চয়তা আর ভরসা না পাবার ভয়।
পরবর্তী ধাপে আসে বিয়ে। আরেক অনিশ্চয়তা। আরেক ভয়। যে লাইফ পার্টনার হয়ে আসবে, সে কেমন হবে। আদৌ বোঝাপড়া হবে তো? যদি সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যায়, তখন? সারাজীবনের জ্বালাপোড়া শুরু হবে তখন।
বিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনায় আসে বাচ্চাকাচ্চা। এরপর বাচ্চাকাচ্চা হলে, এই বাচ্চাকাচ্চা মানুষ করার চাপ। ঠিকমত মানুষ হবে তো? আমি মারা গেলে এই বাচ্চাগুলোর কি হবে?
এবার শুরু মরে যাবার ভয়। এবার বাচ্চাও বড় হতে থাকবে। এবং তার জীবনেও টেনশন শুরু হবে। ভালো বাপ মা হলে এই টেনশনের শেয়ার আপনার উপরও পড়বে। আর এই সাইকেল চলতে থাকবে।
এরপর জীবনের একটা পর্যায়ে সফল হবার তীব্র ইচ্ছা জাগবে। সফল বলতে সবাই যা বোঝে আরকি। সবার গাড়ি বাড়ি আছে, আমারও তো লাগবে? কিন্তু যদি না হয়, তখন? নেক্সট জেনারেশনের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম তো দিয়ে যাওয়া লাগবে।
আর এতো চিন্তা করে একদিন শরীরটা নষ্ট হবে। মাথার চুল গুলো হারিয়ে যাবে। সতেজ শরীরটা শেষ হবে। অসুস্থ হয়ে শেষ জীবনে মরনের চিন্তা এতো বেশি ভর করবে, তখন শুরু হবে, ‘মরনের পর কি হবে’ সেই অনিশ্চয়তা।
সব মিলিয়ে সেই ভয় চলতেই থাকবে।
পরিশেষে, প্রয়াত জনপ্রিয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি অভিনীত সেই জনপ্রিয় গানের লাইনের মত হয়ত আমাদের উপলব্ধি আসবে ‘তেল গেলে ফুরাইয়া বাত্তি যায় নিভিয়া, কি হবে আর কান্দিয়া?’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন