জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা রাজধানী ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সরকারি কলেজগুলোকে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়া শুরু হয়।
কলেজগুলা হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
তবে ঢাবি অধিভুক্ত করার পর ঢাকার সেরা ৭ টি কলেজের পড়াশুনার মান বৃদ্ধির তো দূরে থাক,নানা অব্যবস্থাপনা, অবহেলা ও তাল-বাহানা শুরু করে ঢাবি প্রশাসন। পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে সাত-কলেজবাসী।
এছাড়াও পরীক্ষা রেজাল্ট নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। পরীক্ষা নেওয়ার পর এক-থেকে দেড় বছর পর রেজাল্ট পাওয়া যায়। ফলে সেশনজট যেন সাত কলেজের নিত্যকার সঙ্গী। পরীক্ষার খাতা অবমূল্যায়ন করা হয় সাত কলেজের পরীক্ষার্থীদের।সাত কলেজকে গণহারে ফেইল করা যেন ঢাবির একটা আর্ট। অথচ ঢাবি-অধিভুক্ত হওয়ার আগে বাংলাদেশের মধ্যে রেজাল্টে ১ম সারির দিকে থাকত।
এছাড়াও ফর্ম ফিল আপ করা থেকে প্রতিটা প্রশাসনিক কাজে ভোগান্তির শেষ নেই। এতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা রীতিমতো বাকরুদ্ধ।কবে এই ভোগান্তির হবে শেষ।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে প্রায় ২ বছর বেশি সময় ধরে বন্ধ আছে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। তবে আগামী সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা নিশ্চিত করার উপর ভিত্তি করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
যার প্রেক্ষিতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বাগ্রে খুলে দিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এর সংগৃহীত অগ্রাধিকার তালিকার ভিত্তিতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা প্রদান করা হচ্ছে।
তবে এক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত করেজের শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজ প্রশাসন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার ফলে ইউজিসির সংগৃহীত তালিকায় ঠাঁই হয়নি সাত কলেজে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর। যার ফলে করোনার টিকা প্রদানের শুরু থেকেই সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা ছিটকে পড়ে। অবশ্য সম্প্রতি সরকার ঘোষিত গণটিকা কার্যক্রমে ১৮ বছর বয়সীদের টিকার আওতায় আনার ঘোষণায় সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা কিছুটা আশার আলো দেখলেও পরবর্তীতে সর্বনিম্ন ২৫ বছর বয়সীদের টিকা প্রদানের সিদ্ধান্তে আবারো অনিশ্চয়তার তৈরি হয়।
এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা বলছে, করোনাভাইরাসের টিকা নিশ্চিত করতে স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রশাসনের চেষ্টার বিকল্প কিছু নেই। যেহেতু এই টিকা প্রদানের উপর ভিত্তি করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনতে প্রশাসনকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সরকারি বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসেন নোলক বলেন, করোনার টিকা নিয়ে শুরু থেকেই আমরা ধোঁয়াশার মধ্যে ছিলাম। এমনিতেই দীর্ঘ সময় প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে আমাদের পড়ালেখার যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। আমরা চাই প্রতিষ্ঠান থেকে করোনা ভাইরাসের টিকা নিশ্চিত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যবস্থা করা হোক।
সংগৃহীত ডাটাবেজ অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় করে শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সায়মা নাহার বলেন, সেপ্টেম্বর মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলো দেয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার।
তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। সাত কলেজে যদি আগে থেকেই টিকা নিশ্চিত করা না হয় তবে পরবর্তী কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে যাবে। আমরা চাই না সেশনজট আমাদের আরো ক্ষতি হোক।
এছাড়াও সম্প্রতি ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার নির্দেশনা মোতাবেক সকল শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ১৮ বছরের উর্ধ্বে সকল শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী টিকা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো। শিক্ষকরা অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধ কল্পে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ৭ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নির্ধারিত টিকা কেন্দ্র সকাল ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে করোনার টিকা গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করার অনুরোধ করা হল।
তবে পরবর্তীতে টিকার বয়সসীমা ২৫ বছর করা হলেও কলেজের ১৮ উর্দ্ধ ও ২৫ এর কম বয়সী শিক্ষার্থীরা কিভাবে টিকা পাবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এটিএম মইনুল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিতে সরকারের নির্দেশনা রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছি। কিন্তু ১৮ বছর বয়সীদের টিকা দেয়ার ঘোষণার পর এই কার্যক্রমে কার্যক্রমে ভাটা পড়েছিল। এখন যেহেতু আবারও বয়সের সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এছাড়াও কোনো শিক্ষার্থীই টিকা বঞ্চিত হবে না।
জানিয়ে ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের সকল তথ্য সংগ্রহ করে রেখেছি। এরপর আবার গণটিকার আওতায় ২৫ বছর বয়সের অনেক শিক্ষার্থীই স্থানীয় পর্যায়ে টিকা গ্রহণ করছে। এরপরও যারা বয়স ও জাতীয় পরিচয় পত্র জটিলতায় টিকা গ্রহণ করতে পারছে না তাদের জন্য রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন