পনের বছর আগে বিয়ে হয় জালাল উদ্দিন (৩৫) ও সালমা (৩০) দম্পতির। তারা উভয়ই রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। জালাল উদ্দীন মৃত শামসুল হক মোল্লার বড় ছেলে ও সালমা খাতুন মৃত সালামের মেয়ে। নিজের ইচ্ছায় পছন্দ করে পারিবারিক ভাবে বিয়ে করেছিলেন তারা। লেখাপড়া জানা ছেলে হলেও সে সময় জালাল ছিলেন বেকার। তাদের বিয়ে জালালের বাড়ির সবাই মেনে নিলেও মানতে পারেনি তার মা খাদিজা। তাই জালাল বাধ্য হয়ে তার শশুর বাড়িতে থাকতেন। সে সময় জালালের শাশুড়ী আম্বিয়া থাকতেন বিদেশে।
সালমার মা আম্বিয়া বলেন, আমার স্বামী নেই। আমি বিদেশে অনেক কষ্ট করে টাকা পাঠিয়ে আমার ছোট ছোট ছেলে মেয়েকে লালন পালন করেছি। মেয়ের বিয়ের সময় দেশে ছিলাম না। তবে জামাই আমার কাছে যখন যত টাকা চেয়েছে আমি মেয়ের সুখের জন্য দিয়েছি। একবার আমার জামাই বললো গরুর খামার করবো ৪ লক্ষ টাকা লাগবে । তখন আমার জমানো কিছু টাকা ও চকরাজাপুর চরের ১বিঘা জমি এবং বাঘা সদরের ৩ কাঠা জমি বিক্রি করে তাকে ৪ লক্ষ টাকা দিই। তার এ খামার ব্যাবসায় লোকসান হয় বলে আমাকে জানায়। পরে বিদেশ যাবে বলে আবার আমার কাছে ৫ লক্ষ টাকা চায়। স্থানীয় প্রতিবেশীর কাছ থেকে সুদে নিই ৪ লক্ষ ও বাড়িতে থাকা দুধের গরু বিক্রি করে ৫ লক্ষ টাকা তাকে দিই। এ নিয়ে মোট ৯ লক্ষ টাকা জামাইকে দিয়েও সুখ জোটেনি মেয়ের কপালে। তাই আমি টাকা ফেরত চাই।
জালাল বিদেশে যাওয়ার পরই শুরু হয় সালমার সংসারে ভাঙ্গন। ইতিমধ্যে সালমা দুই সন্তানের জননী। এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে সালমা বলেন, আমার স্বামী বিদেশ গিয়ে আমাকে ঠিকমতো টাকা পাঠাতো না, ফোনে ঠিক মতো কথা বলতো না। যে টাকা পাঠাতো তা দিয়ে দুইটি সন্তান নিয়ে চলা খুবই কঠিন হতো। তার পরিবার আমাকে নির্যাতন করতো তাই বাধ্য হয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। আমার স্বামী গত তিন বছর আগে আমার বিনা অনুমতিতে আরেকটি বিয়ে করেছে। এ বিয়ের কথা শুনে আমার শশুর হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে। আমার স্বামী আর কোন যোগাযোগ না করায় ছেলে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে গত ৭ মাস পূর্বে মায়ের সহযোগিতায় জর্ডান চলে আসি। আমার স্বামী আমার মায়ের টাকায় বিদেশ গিয়ে আমার সাথে এমন প্রতারণা করল আমি তার বিচার চাই।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, জালালের ভাই জামাল এবং তার মা অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করেন। তবে স্থানীয় প্রতিবেশীরা ঘটনার সত্যতা আছে বলে জানান। জালালের ঠিকানা ও যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর চাইলে সাংবাদিককে নাম্বার ও ঠিকানা দেননি জামাল ও তার মা।
চকরাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল আজম মুঠোফোনে বলেন, জালাল ও সালমার বিষয়ে আমি জানি। পূর্বে আরও ২ বার বসে সালিশে সমাধান করা হয়েছে। জামাই শাশুড়ীর টাকা লেনদেন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ হয়েছে। তবুও সমাধানের জন্য উভয় পক্ষকে বসতে বলেছি। কিন্তুু জালালের মা ও ভাই বসতে রাজি হয় নি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন