আসলে সন্তান সুসন্তান হয়ে বেড়ে উঠুক, এটা চাওয়া আর সন্তানকে উপযুক্ত করে লালন করা—এ দুয়ের মধ্যে আকাশপাতাল তফাত। আর এ দুর্ভাগ্যের শুরু বিয়ের প্রথম দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই। একসময় বিয়ের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মা-বাবা হওয়া। কিন্তু এখন অধিকাংশ দম্পতির দৃষ্টিভঙ্গি হলো, বিয়ের পর প্রথম দু-চার বছর টোনাটুনির মতো ঘুরে বেড়াই, তারপর দেখা যাবে।
ঘটনাচক্রে যদি এর অন্যথা হয় এবং অনিচ্ছাসত্ত্বেও সন্তানের আগমনকে মেনে নিতে হয়, তখন যে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, সে জন্মায় মানসিক অনিশ্চয়তা আর অস্থিরতা নিয়ে। হয়তো এর প্রভাব থেকে সে আর মুক্ত হতে পারে না। কারণ ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে ভ্রুণ অবস্থা থেকেই যে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং অনুভূতি দিয়ে শিশুর চেতনা, মনস্তত্ত্ব ইত্যাদি প্রভাবিত হয়, এটা এখন এক গবেষণালব্ধ সত্য।
তাই সমাজবদলের পালায় বিয়ের দৃষ্টিভঙ্গিতেও যখন থেকে এ পরিবর্তন এসেছে, তখন থেকেই ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে সন্তানসংক্রান্ত নানা জটিলতা। আগে বাবারা ব্যস্ত থাকতেন, মা-ই সন্তান দেখাশোনা করতেন। বাবার ছিল শাসন, যা সন্তানেরা মাথা পেতে নিত। কিন্তু এখন বাবা তো ব্যস্ত থাকেনই, মা-ও থাকেন ব্যস্ত। সন্তান তাহলে কোথায় যাবে? হয়তো বলা হবে যে, জীবিকার প্রয়োজনেই বাধ্য হয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়।
সময় দেয়ার সুযোগ কোথায়? তাহলে এটা মা-বাবা হওয়ার আগেই চিন্তা করা উচিত ছিল যে, সন্তানকে সময় দিতে পারবেন কি না। কারণ সন্তানকে যদি আপনি সময় দিতে না পারেন, তাহলে সে সন্তান আর যা-ই হোক, সুসন্তান হবে না। আর সময় দেয়ার ক্ষেত্রেও কত সময় দিচ্ছেন, সেটা নয়; সময়টা আপনি কত আন্তরিকভাবে দিচ্ছেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি হয়তো তার পাশে বসে আছেন, কিন্তু টিভি দেখছেন বা ফোনে কথা বলছেন, এটা তো সময় দেয়া নয়। তাকে মনোযোগ দিতে হবে।
আমরা সন্তানকে মনোযোগ না দিয়ে জিনিস দেই—খেলনা দেই, পুতুল, আইপ্যাড, কম্পিউটার বা কার্টুন দেই। আমরা চাই, সে এটা নিয়ে মেতে থাকুক, আমাকে যেন বিরক্ত না করে। কিন্তু সেই খেলনা বা টিভির আকর্ষণ কতক্ষণ? কিছুক্ষণ পরেই হয়তো তাকে একঘেয়েমি পেয়ে বসে। সে বিরক্ত হয়। একপর্যায়ে তার বিরক্তি ও ক্ষোভ জমা হতে থাকে মা-বাবার প্রতি।
অথবা টম এন্ড জেরির কার্টুন দেখে দেখে দুষ্টু হওয়ার প্রবণতা তার মধ্যেও সৃষ্টি হয়। অথবা চাওয়ামাত্র পেয়ে অভ্যস্ত হয়ে জেদি হয়ে যায়। অথবা ভার্চুয়াল ভাইরাসে আসক্ত হয়ে মেধাহীন বা উচ্ছৃঙ্খল হয়। তাই সন্তানকে সুসন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে আন্তরিকভাবে সময় দেয়া বা কোয়ালিটি সময় দেয়ার কোনো বিকল্প নেই।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন