সুবর্ণ চরে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ সমাবেশ

সুবর্ণ চরে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ সমাবেশ

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস, ২০২৩’ উপলক্ষে ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পর্যন্ত নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে এগিয়ে আসুন, সহিংসতা প্রতিরোধে বিনিয়োগ করুন’- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ১৬ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে,কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা, সেমিনার, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সচেতনতামূলক লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

এছাড়াও পত্র-পত্রিকায় ফিচার-আর্টিকেল প্রকাশ ও টেলিভিশনে টক শো ও আলোচনা অনুষ্ঠান করার নির্দেশ দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।এই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ ডিসেম্বর ২০২৩ নোয়াখালীর সুবর্ণ চর এর আট কপালিয়া এলাকায় এন আর ডি এস সংস্থার পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় "নারী জন্য বিনিয়োগ, সহিংসতা প্রতিরোধ ও নারীর মানবাধিকার রক্ষার সংগ্রামে"আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২৩ সংহতি সমাবেশ।

উক্ত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন নারী মানবাধিকার কর্মী সহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সদস্য ও আরো উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান। উক্ত সমাবেশে উপস্থিত ছিল শতাধিক নারী যাদের নিয়ে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সেখানে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে নারীর অধিকারসংশ্লিষ্ট সকল খাতে সমন্বিত বিনিয়োগের সুপারিশ করেছেন নারী নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে উপস্থিত থাকা নারীরা তাদের সুখ দুঃখের কথা, তাদের চলার পথে নানা বাধা বিপত্তির কথা তুলে ধরেন এবং এর থেকে পরিত্রাণ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সকল নারীকে এক জোট হয়ে এগিয়ে আসতে হবে ও নারী বিষয়ক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে।

সমাবেশে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখে চর চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ এর মাননীয় চেয়ারম্যান ও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা নারীরা এবং একজন সচেতন নারী সাংবাদিক। নারী সাংবাদিক নওশিন মামুন তার বক্তব্যে বলেন- " আসলে আমরা বলি যে নারীদেরকে সুরক্ষিত করো।

এখন যদি আমরা নারীরা নিজেদের সুরক্ষা নিজেরা না করি বা পরিবার থেকে এ বিষয়ে যদি কোন পদক্ষেপ না নেই। তাহলে কিন্তু আর কেউ আসবে না আমাদের সুরক্ষার জন্য।আমরা অনেকেই জানি জাপানে বলা হয়েছিল আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি দেবো।মা একজন নারী সন্তানরা তার শিক্ষা জীবনের প্রথম শিক্ষা টা কিন্তু তার মায়ের কাছ থেকে পায়।

আপনি আমি যদি সচেতন হোই আমাদের দেখা দেখি অন্য পরিবার সচেতন হবে তারা এগিয়ে আসবে নারী বিষয়ক সচেতনতা নিয়ে। একজন নারীর সফলতার পিছনে একটি বড় ভূমিকা রাখেন কিন্তু তার মা। আমার আজ এই পর্যন্ত আসা আমার মা এর কারনে সে কিন্তু খুব খেটেছে আমার পেছনে। আমার একটি মেয়ে আছে আমিও চাই সে সুরক্ষিত থাকুক সে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হোক।

আমার শাশুড়ি ও কিন্তু আমাকে খুব সাপোর্ট করে আরো সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।তাই আমি বলবো আমাদের সবার উচিত নারীদের সমান অধিকার ও তাদের সুরক্ষিত থাকার বিষয়টি নিয়ে সবাইকে এক জোট হতে হবে। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন "নারী যদি কোন রকম অস্বস্তিতে পড়েন এবং কোন নির্যাতনের শিকার হন তাহলে তাৎক্ষণিক যেন পুলিশের নিকট আসেন।

বাংলাদেশ নারী ও শিশু নির্যাতন আইনকে মাথায় রেখে পুলিশ তার নিজের পদক্ষেপ নিবেন।আরো বলেন নারীদের পাশে পুলিশ ও মানবাধিকার কর্মীরা সবসময় ছিলেন ও থাকবেন বলে আশ্বাস দেন।বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ নারী। নারী উন্নয়ন তাই জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। সকল ক্ষেত্রে নারীর সমসুযোগ ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একান্ত অপরিহার্য।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ২০১১ সালের জরিপ মতে, শতকরা ৮৭ ভাগ নারী স্বামীর মাধ্যমে কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হন। জাতিসংঘের বিশেষ রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশে ৬০ শতাংশ বিবাহিত নারী জীবনে কোনো না কোনো সময়ে স্বামী কিংবা তার পরিবার বা উভয়ের দ্বারা নির্যাতিত হন।

এ ছাড়াও বিশ্বজুড়ে প্রতি ১০০ জনে ৭ জন নারী কোনো না কোনোভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ৭ শতাংশ নারী সরাসরি ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। উন্নত-অনুন্নত সব দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র আরও অমানবিক।বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, পরিবর্তিত হচ্ছে সমাজ কাঠামো, বিকশিত হচ্ছে সভ্যতা। পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে মানুষের জীবনযাত্রায়। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য, বন্ধ হয়নি নারী নির্যাতন।

নারী শব্দটি প্রাচীন কাল থেকে প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ নানাভাবে নির্যাতিত ও শোষিত হচ্ছে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী এবং সমাজের উন্নয়নে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু তারপরও সাধারণভাবে তারা শান্তি, নিরাপত্তা ও অধিকারের দিক দিয়ে এখনো পুরুষের সমকক্ষ নয়।

অথচ এই নারীর কারণেই একটি সন্তান পৃথিবীর আলো দেখতে পায়, একটি সুন্দর জীবনের শুভ সুচনা হয়।আধুনিক কালে নারীর ক্ষমতায়ন ঘটলেও নারী নির্যাতন বন্ধ হয় নি। অথচ দেশে আইনের সঠিক ব্যবহার নেই বললেই চলে। তাই নারী নির্যাতন কমছে না। বরং বাড়ছে।

তবে সবচেয়ে বিবেক অপমানিত হয় তখন যখন আমরা দেখি নারী দ্বারা নারী নির্যাতিত হচ্ছে। মানবসভ্যতা গড়ে ওঠার পেছনে নারীর অবদানকে ছোট করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। লাখ লাখ বছর আগে গুহাবাসী নারী-পুরুষ যৌথ প্রচেষ্টায় যে জীবন শুরু করেছিল, তা ক্রমেই বিকশিত হয়ে আজকের সভ্যতার সৃষ্টি। নারী-পুরুষের স্বার্থ এক ও অভিন্ন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password